Breaking News

কারাগারের ফোনের অপেক্ষায় নিজামীর স্বজনরা

ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে প্রস্তুতি চলছে মানবতাবি‌রোধী অপরা‌ধের দা‌য়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ম‌তিউর রহমান নিজামীর ফাঁসি কার্যকরের। আর তার রাজধানীর বনানীর মিশন নাহারের বাড়িতে অবস্থান করা পরিবারের সদস্যরা ‘শেষ দেখা’ করতে কারা কর্তৃপক্ষের ফোনের অপেক্ষায় রয়েছেন।

শেষবা‌রের মতো নিজামীকে দেখতে তার স্ত্রী, বড় ছে‌লে, বড় পুত্রবধূ, ছোট মে‌য়ে ও দুই  না‌তি ছাড়া কেউই যা‌বেন না। নিজামীর চার ছে‌লের ম‌ধ্যে তিনজন ও দুই মে‌য়ের একজন এখন পর্যন্ত বি‌দে‌শে অবস্থান কর‌ছেন। ফলে তা‌দের প‌ক্ষে বাবার স‌ঙ্গে শেষ দেখা করা সম্ভব হ‌চ্ছে না।

মঙ্গলবার (১০ মে) দুপু‌রে নিজামীর ঘ‌নিষ্ঠ ক‌য়েকজন  এমনটাই জা‌নি‌য়ে‌ছেন।

রাজধানীর বনানীর ১৮ নম্বর রোডের জে ব্ল‌কের ১৮ নম্বর রোডের ৬০ নম্বর বাড়ি মিশন নাহা‌রে থাকেন বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড এবং হত্যা-গণহত্যা ও ধর্ষণসহ সুপিরিয়র রেসপন্সিবিলিটির (ঊর্ধ্বতন নেতৃত্ব) দায়ে ফাঁসির দড়িতে ঝোলার অপেক্ষায় থাকা দেশের শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী নিজামীর পরিবারের কয়েকজন।

ফাঁসির দড়ি এড়াতে সর্বশেষ সুযোগ হিসেবে এখন কেবলমাত্র রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইতে পারবেন নিজামী। প্রাণভিক্ষা না চাইলে বা চাওয়ার পর আবেদন নাকচ হলে শুরু হবে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের চূড়ান্ত প্রক্রিয়া। তবে ফাঁসি কার্যকরের আগে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের কনডেম সেলে থাকা নিজামীর সঙ্গে শেষবারের মতো দেখা করতে পারবেন তার স্বজনেরা। কারা কর্তৃপক্ষ ফোন করে কারাগারে আসতে বলবেন তাদের। মিশন নাহারে থাকা স্বজনেরা সেই ফোনের অপেক্ষায় রয়েছেন বলেই জানিয়েছেন পরিবারের ঘনিষ্ঠরা।  

নিজামীর চার ছে‌লে ও দুই মে‌য়ের ম‌ধ্যে বড় ছে‌লে না‌জীব মো‌মেন ‌দে‌শে ব্যা‌রিস্টারি ক‌রেন। বাকি পাঁচজনের ম‌ধ্যে ডা. খা‌লেদ থা‌কেন অ‌স্ট্রেলিয়ায়, তা‌রেক থা‌কেন অা‌মে‌রিকায় ও ছোট ছে‌লে তালহা মা‌লয়ে‌শিয়ায় থা‌কেন। বড় মে‌য়ে খা‌দিজা থা‌কেন লন্ড‌নে ও ছোট মে‌য়ে মহ‌সিনা মা‌লয়ে‌শিয়ায় পিএইচ‌ডি কর‌তে গে‌লেও  এখন বাংলা‌দে‌শে অা‌ছেন।

মিশন নাহারের চতুর্থতলার ফ্ল্যাটে তাই এ মুহূর্তে বড় ছেলে ব্যারিস্টার না‌জীব মো‌মেন, বড় পুত্রবধূ ও দুই  না‌তি   এবং ছোট মে‌য়ে মহ‌সিনাকে অবস্থান করছেন নিজামীর স্ত্রী শামসুন্নাহার নিজামী। বিদেশে অবস্থান করা পরিবারের সদস্যদের  মঙ্গলবার পর্যন্ত দে‌শে আসার কোনো সম্ভাবনা নেই ব‌লে জানিয়েছে পারিবারিক একটি সূত্র।

নিজামীর ঘ‌নিষ্ঠ একজন বাংলা‌নিউজ‌কে ব‌লেন, নিজামীর যে চার সন্তান বিদেশে আছেন, তারা দেশে এসে কি তাদের বাবা‌কে বাঁচা‌তে পার‌বেন? বরং উল্টো ঝা‌মেলায় পড়ার আশঙ্কা আছে। সরকার য‌দি তা‌দের আর বি‌দেশ যে‌তে না দেয়? এজন্য তার ফাঁসির পরও ওই চার ছেলে-মেয়ের কেউই তার মরদেহ দেখতে দেশে আসবেন না।  

তিনি জানান, এমনকি নিজামীর মৃতদেহ দেখানোর জন্যও বিদেশে অবস্থানরতদের আসার অপেক্ষা করবেন না দেশে থাকা পরিবারের সদস্যরা। ফাঁসি কার্যকর হলে সরাসরি নিজামীর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে পাবনার সাঁথিয়ার গ্রামের বাড়িতে। সেখানকার পারিবারিক কবরস্থানে নিজামীকে দাফন করার সম্ভাবনা বেশি বলেও জানান তিনি।

ওই ঘনিষ্ঠ আত্মীয় জানান, এখন কারাগার থেকে শেষ দেখার খবর আসার অপেক্ষায় আছেন বাসার সদস্যরা। কোনো ধরনের খবর এলেই তারা কারাগারের উদ্দেশ্যে রওনা হবেন।

পারিবারিক অন্য একটি সূত্র জানিয়েছে, কয়েকদিন আগে গাজীপু‌রের কা‌শিমপুর কারাগা‌রে নিজামী‌কে দেখ‌তে গি‌য়ে‌ছিলেন তার বাসায় থাকা পরিবারের সদস্যরা। এরপর থে‌কে এখন পর্যন্ত তা‌কে আর দেখ‌তে যান‌নি তারা। এমনকি তার স্ত্রী শামসুন্নাহার নিজামী বাড়ির বাইরেও বের হননি।

দ্বিতীয় দিনের মতো সরেজমিনে গিয়ে মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত নিজামীর পরিবারের কোনো সদস্যকে মিশন নাহারের বাড়ি থেকে বাইরে বের হতে দেখা যায়নি। তবে মাঝে মধ্যে ষষ্ঠ তলা থেকে নারীকণ্ঠ ভেসে আসছিল। এছাড়া নিজামীর দুই নাতিকে গ্রাউন্ড ফ্লোরে খেলতে দেখা গেছে।

তবে নিজামীর পরিবার সম্পর্কে বাসার কেয়ারটেকার থেকে শুরু করে দারোয়ানরা পর্যন্ত তেমন মুখ খুলছেন না। বেশিরভাগ সময়ই প্রধান গেট বন্ধ রেখে ভেতরে থাকছেন তারাও।  
 

No comments