Breaking News

’আপনি’ অনেক বড় পাপী,‘আপনার‘ সব কথা শোনা পাপ:সেতুমন্ত্রীকে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা

টানা দ্বিতীয় মেয়াদে সরকার গঠন করে ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ। ক্ষমতার চিরচেনা স্বার্থের দ্বন্দ্বে অনেক ত্যাগী, পুরনো নেতাকর্মীরা হতাশা, ক্ষোভ ও বঞ্চনায় মুখ লুকিয়ে বেড়ান। কিন্তু আর আজ সময়ের স্রোতে তেমনি একজন প্রাক্তন ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় নেতার ক্ষোভের মুখে পড়েছেন আওয়ামী লীগ নেতারা।

বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডি-৩/এ প্রিয়াংকা কমিউনিটি সেন্টারে দফতর উপ-কমিটির সভায় এমন ঘটনা ঘটে।

গত ২০ মার্চ গণভবনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে ১০ ও ১১ জুলাই সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়। এরপর গত ১১ এপ্রিল ধানমন্ডিস্থ আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে সম্মেলন প্রস্তুত কমিটিসহ ১১টি উপ-কমিটি ঘোষণা করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম।

কমিটির ঘোষণার পর থেকে বিভিন্ন উপ-কমিটিগুলো তাদের প্রস্তুতি সভা করছিল। তেমনি আজ প্রথম দফতর উপ-কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয় প্রিয়াংকা কমিটিউনিটি সেন্টারে। কিন্তু সভার শেষ মূর্হুতে ঘটে অনাকাঙ্খিত ঘটনা। ঘটনার শুরু সভা শেষ করার শেষ সময়ে।

সভাকক্ষে উপস্থিত কেন্দ্রীয় নেতাদের উদ্দেশ্যে উপ-দফতর কমিটির আহ্বায়ক ওবায়দুল কাদের বলেন, কেন্দ্রীয় নেতাদের কারও কিছু বলার আছে। এসময় সভাকক্ষে উপস্থিত মোশাররফ হোসেন রাজা বলেন, আমার বক্তব্য আছে স্যার। প্রতি উত্তরে ওবায়দুল কাদের বলেন, কি? এরপর সভাকক্ষে বক্তব্য শুরু করার চেষ্টা করেন রাজা। কিন্তু দফতর উপ-কমিটির আহ্বায়ক সেতু মন্ত্রী বলেন, ‘না না এটা ভাষণ দেয়ার সভা না।

তার জবাবে রাজা বলেন, ‘কাদের ভাই, আজকে দিতেই হবে। গত ৩৮ বছরে আপনি ৩৮ মিনিটও কথা বলার সুযোগ দেননি। আমরা সাবেক ছাত্রলীগের কর্মীরা কিভাবে দিন কাটাচ্ছি ? কিভাবে রাজনীতি করছি?  বিরোধীদলের সময় আমরা জেল খেটেছি, জেল থেকে বের হয়েছি কিনা, কখনো খোঁজও নেননি।

এর জবাবে কাদের বলেন, আমি তোমার সাথে পরে কথা বলব। তার জবাবে রাজা বলেন, ‘না কাদের ভাই, আমার কথা শুনতে হবে। কমিটির বিষয় না। বিষয় ক্ষমতা-সমতা। তার জবাবে কাদের বলেন, আপনার কথা শুনবো? জবাবে রাজা আরও বলেন,  আপনি অনেক বড় পাপী, আপনার সব কথা শুনা পাপ।

কাদের বলেন, কেন? সভাপতির আসনে বসা ওবায়দুল কাদের রাজার উদ্দেশ্যে মৃদুস্বরে বলেন, ‘অসুস্থ ছেলে। তা শুনে আরও ক্ষিপ্ত এবং রাগান্বিত হয়ে ওঠেন রাজা। তখন তিনি সেতু মন্ত্রীর উদ্দেশ্যে বলেন, স্যার একবারও আর অসুস্থ ছেলে বলবেন না।

এসময় সভা কক্ষে কিছু নেতা রাজাকে কথা বন্ধ করে বসার অনুরোধ করেন। কিন্তু তিনি তাদের পাত্তা না দিয়ে বলেন, বসার প্রশ্নই আসে না। সভাকক্ষে এমন চলতে থাকলে বিশৃংখলার সৃষ্টি হয়। বিশৃংখলার মধ্যে অনেক নেতা উপস্থিত সাংবাদিকদের ছবি এবং ভিডিও ধারণ করা থেকেও নিষেধ করেন।

এসব পরিস্থিতিতে ওবায়দুল কাদের রাজার উদ্দেশ্যে বলেন, একটু আগেই তো ডিসিপ্লিনের কথা বললাম। তার জবাবে রাজা বলেন, আমি ডিসিপ্লিন মানার লোক না। সেটা আপনি ভাল ভাবেই জানেন। আর আজকে এ পর্যায়ে আমাকে পৌঁছাইছেন আপনি। বাংলার বাণীর কথা আপনি স্মরণ করেন।

এরপর ওবায়দুল কাদের রাজার উদ্দেশ্যে বলেন, এখন তুমি কি বলতে চাও? বল? কিন্তু কথা বক্তব্য বা কথা বলা শুরু করার আগে রাজা ওবায়দুল কাদেরের উদ্দেশ্যে বলেন, এখন বলেন, মিডিয়া সরাবেন না।

প্রাক্তন এই ছাত্রলীগ নেতা রাজা ক্ষোভ-অভিমান বা বঞ্চনায় হতাশাগ্রস্থ হয়ে সভাকক্ষে এমন ঘটনা শুরু করলে উপস্থিত অনেক নেতাই বিব্রত ও বিরুপ পরিস্থিতিতে বলেন।

এসব পরিস্থিতিতে রাজার রাগ ও অভিমান প্রশমিত করতে চেয়ার থেকে উঠে আসেন কয়েকজন প্রাক্তন ছাত্রলীগ নেতাও। কিন্তু তারাও ব্যর্থ রাজার অভিমানের কাছে। একসময় চেয়ার থেকে উঠে এসে রাজাকে থামাতে আসেন প্রাক্তন ছাত্রলীগ নেতা হুইপ ইকবালুর রহিম এবং নজরুল ইসলাম বাবু। কিন্তু তারাও দুজনে রাজাকে থামাতে ব্যর্থ হন।

এছাড়াও রাজার রাগ নিবৃত্ত করতে কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতাও নির্দেশ দেন। কিন্তু কারও কোন নির্দেশ কর্ণপাত করছিলেন তিনি। একসময় সভা কক্ষে উপস্থিত রাজার সহধর্মিনী সৈয়দা রুবিনা আক্তার মিরাও তাকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেন। কিন্তু উল্টো রাজা তাঁর স্ত্রী মিরাকে ধমক দিয়ে বসিয়ে দেন। মিরা যুব মহিলা লীগের নেত্রী এবং র্বর্তমানে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সহ-সম্পাদক।

ওবায়দুল কাদের গণমাধ্যম কর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, এখানে আমাদের কিছু আভ্যন্তরীণ (ইন্টারনাল) বিষয় আছে। আমাদের অনেকের মধ্যেই ক্ষোভ-হতাশা আছে। এসব অনুভূতি হতেই পারে। আমাদের মধ্যে পারস্পরিক দুঃখ থাকে। কিন্তু তারপরও এই নিয়েই আওয়ামী লীগ। আবার চিরস্থায়ী কিছু না।

কাজেই এবিষয়টা নিয়ে আমি মিডিয়াকে অনুরোধ করব, এটা আপনারা দয়া করে অফ দ্যা রেকর্ড হিসেবে রাখার অনুরোধ করে আনুষ্ঠানিক সভার সমাপ্তি ঘোষণা করেন সভার সভাপতি কাদের।

পরবর্তীতে রাজার ক্ষোভ শোনার জন্য নিজ আসনের পাশে ডেকে নেন সেতু মন্ত্রী। সেখানে রাজা তার ছাত্রলীগ থেকে শুরু করে আজ অবধি বিভিন্ন ঘটনার অনুষঙ্গ টেনে ক্ষোভ এবং হতাশা পুর্নব্যক্তি করছিলেন। রাজাকে নিবৃত্ত করার জন্য আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক আব্দুস সোবাহান গোলাপ কিছু কর্মীকে নির্দেশ দেন। তার নির্দেশনায় জনি নামের ঢাকা কলেজের একজন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা রাজার দিকে তেড়ে যান। তখন রাজাও  জুনিয়র কর্মী জনিকেতাকে মারতে উদ্যত হন।

একসময় রাজা কিছুটা অসুস্থ হয়ে পড়েন। এসময় ওবায়দুল কাদের রাজার স্ত্রী রুবিনা আক্তার মিরাকে তার স্বামীর ক্ষোভ এবং হতাশা শুনে তাকে জানানোর নির্দেশ দিয়ে বলেন, তুমি (মিরা) শোন। তার রাগ ক্ষোভ কোথায়। আমি শুনে সবার সাথে পরামর্শ করব। আর যদি আমার নিজের সামর্থ্য থাকে তাহলে নিজেই সমাধান করার চেষ্টা করব।

সভায় সভাপতিত্ব করছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্র্রী ওবায়দুল কাদের। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন আহমদ হোসেন, বি.এম মোজাম্মেল হক, অ্যাডভোকেট মৃনাল কান্তি দাস, ইকবালুর রহিম, সুজিত রায় নন্দী, এস. এম কামাল হোসেন, শাহে আলম, শফি আহমেদ, সৈয়দ আবদুল আউয়াল শামীম, সৈয়দা রুবিনা আক্তার মিরা, মাহমুদ হাসান রিপন, মাহফুজুর হায়দার চৌধুরী রোটন, বদিউজ্জামান সোহাগ, সুশান্ত বাইন প্রমুখ। সভা পরিচালনা করেন আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক এবং দফতর উপ-কমিটির সদস্য সচিব আবদুস সোবহান গোলাপ।

No comments